জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ২৭টি বিদ্যালয়ের ৯৬৭ জন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমান পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত রোববার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনপূর্ব এই বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জাড়ি করেছে মন্ত্রনালয়। চিঠি পেয়ে শিক্ষা অফিসার বলছেন, ওই ঘটনার তদন্তে ভূল বোঝাবুঝি হয়েছে। তিনি আইনি লড়াই করবেন। তবে শিক্ষা অফিসারে বরখাস্তের বিষয়ে এলাকার অভিভাবকরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। শুধু শিক্ষা বিভাগই নয়, সরকারি সকল দপ্তরে নজরদারি বাড়াতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন। প্রজ্ঞাপনটি গত ২২ এপ্রিল জারি করা হলেও এলাকায় প্রকাশ পায় ২৭ এপ্রিল।
জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিফুল ইসলাম চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর মোট ছয় মাসে উপজেলার ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৯৬৭ জন বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির অর্থ বিতরণে গুরুতর অনিয়ম করেছেন। তিনি এসব শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত উপবৃত্তির টাকা অভিভাবকের মোবাইল একাউন্টে প্রদান না করে নিজেই আত্মসাতের জন্য বেআইনিভাবে একাউন্টগুলো পরিবর্তন করেছে। যার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বরখাস্ত আদেশ ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, বরখাস্তকালীন সময়ে মো. রফিফুল ইসলাম শুধুমাত্র খোরাকি ভাতা পাবেন। তিনি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ আছে, সরকার দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতিতে অটল। সেই নীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
কালাই পৌরশহরের দোকানদারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, আমার ছেলে কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। উপবৃত্তির জন্য কাগজ-পত্র ও মোবাইল নম্বর নিয়েছে। কিন্তু একবারও উপবৃত্তির টাকা মোবাইলে আসেনি। আমারমত অধিকাংশ অভিভাবকেরই একই অবস্থা। এই স্কুলের প্রায় শতকরা ৮০ জনই উপবৃত্তির টাকা পায় না। শিক্ষা অফিসার ও হেড মাস্টার মিলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করেছে। শুধু শিক্ষা অফিসার কেন, হেড মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত নয়, তাঁকে একবারে চাকুরিচ্যুত করতে হবে।
কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি সবকিছু নিয়ম মেনে করেছেন। তদন্তে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায্যতা প্রমাণ করবেন।
উল্লেখ্য, মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মো. রফিফুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্ত বহাল থাকবে।