জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপি’র এক ইউনিয়ন নেতার বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ১১ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ইজারাদারের কাছ থেকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ওই পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই নেতা আবু তালেব মন্ডল গোপীনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ও একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাই। এঘটনায় জেলা পরিষদ ওই পুকুরের ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ করে বিএনপি নেতা আবু তালেব মন্ডল পুকুর খনন কাজ শুরু করেন। খনন করে কিছু মাটি পুকুরের পাড়ে দিয়ে বাঁকি মাটি বাইরে বিক্রি শুরু করেন। তিনি পুকুর খননের পর রাতের অন্ধকারে বালু উত্তোলন করতে শুরু করেন। পুকুরের তলা থেকে পাড় পর্যন্ত ৩১ ফুট গভীর করে খনন করা হয়। এতে পুকুরটি পানিতে ভরে গেলে পাড়ের ওপর থাকা বাড়িঘর ভাঙনের আশঙ্কা পড়েছে। ৫-৭ ফুট গভীর করে চারিদিকে পাড় ও ঢাল মেরামত করার একটি সুপারিশপত্র গ্রামবাসীদের দেখিয়ে বৈধতার তকমা লাগিয়ে রমরমা মাটি ব্যবসা শুরু করেন আবু তালেব মন্ডল। সেখানে জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের কারও স্বাক্ষর নেই। সেখানে আক্কেলপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য সম্প্রাসারণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। পুকুরটি খননের সময় ট্রাক ও ড্রেজার ব্যবহার করে ব্যাপকহারে মাটি উত্তোলন করা হয়। এসব মাটি স্থানীয় ইটভাটা ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারি সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চেয়ারম্যানের ভাই বিএনপি নেতা আবু তালেব মন্ডল পুকুরটি ৩১ ফিট গভীর করে খনন করেছেন। তিনি দুই মাস ধরে ২৬ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করেছেন। শুধু ক্ষমতার বলে অবৈধভাবে তিনি এ কাজটি করেছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের কারও কথায় কর্ণপাত করেনি। নিজের ইচ্ছামতো গভীরতা করে পুকুর খনন করেছেন। এতে রাস্তা ও বাড়িঘর ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ২১ টি পুকুর ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের আলী মাহমুদপুর গ্রামের ৩.৬৭ একর আয়তনের এই পুকুর হাবিবুর রহমান মল্লিক ৬ লাখ ৫১ হাজার ১০০ টাকায় পুকুরটি গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে আড়াই বছরের জন্য ইজারা পান। তিনি প্রথম বছরের ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৩ টাকা ইজারা টাকা পরিশোধ করে জেলা পরিষদ থেকে তাঁকে পুকুরটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
পুকুরটির ইজারাদার হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, আমি জেলা পরিষদ থেকে পুকুরটি ইজারা নিয়েছি। আমার বাড়ি থেকে পুকুর অনেক দূরে হওয়াই পুকুরের পাশের গ্রামের বাসিন্দা আবু তালেব মন্ডলকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আবু তালেব সবাইকে ম্যানেজ করে পুকুর খননের কাজ করছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা তাঁতে বাঁধা দিয়েছেন।
বিএনপি নেতা আবু তালেব মন্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুকুরটি মাছ চাষের উপযোগী ছিল না। যে ব্যক্তি পুকুর ইজারা নিয়েছিলেন তিনি আমাকে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মাছ চাষের উপযোগী করতে ইজারাদার পুকুরটি সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করেন। পরে স্থানীয় প্রশাসন সংস্কারের জন্য সুপারিশ করলে আমি পুকুর খনন করি। সুপারিরের কাগজটি জেলা পরিষদে জমা না দেওয়া আমার ভুল হয়েছে। এখন কাজটি বন্ধ আছে। ২৬ লাখ টাকা মাটি বিক্রি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরে মাটি বিক্রি করেছি ঠিকই, তবে ২৬ লাখ টাকার মাটি বিক্রি হয়নি। এখন অবশিষ্ট অংশের কাজ না কলে পুকুরে মাছ চাষ করা যাবে না।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান কমল বলেন, আবু তালেব মন্ডল সম্পুর্ণ ব্যক্তি উদ্দ্যেগে অবৈধভাবে পুকুর খনন করেছেন। তিনি মোটেও ঠিক কাজ করেননি। দলীয় পদ পদবী ব্যবহার করে কেউ কোন অনৈতিক কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, জেলা পরিষদ থেকে হাবিবুর রহমান মল্লিককে পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকে পুকুর সংস্কারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি না নিয়ে তৃতীয় পক্ষ পুকুর খনন কাজ করেছেন। এতে ইজারার শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। জেলা পরিষদের মাসিক সভায় পুকুরের ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন চিঠি দিয়ে তাঁর ইজারা বাতিল করা হবে।