হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় জয়পুরহাটে ইউপির সদস্য নুরনবী মন্ডলকে রাস্তায় অর্তকিত হামলা করে পা গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইয়াকুব আলী ও তাঁর কর্মীদের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্টের পর তাঁর নিকট দশ লাখ টাকা চাঁদাও দাবী করা হয়েছে। সেই টাকা না দেওয়ায় তাঁকে এভাবেই উচিত শিক্ষা দেওয়ারও অভিযোগ ওঠেছে। সোমবার (৫ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলার কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের ম্যাড়েরপুকুর নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের অভিযোগ, ফেরদাউস হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলীর ভাই আসামী হয়েছে। ওই মামলায় নুরনবী স্বাক্ষী। তাই গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলী তার নিকট দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। সেই টাকা না দেওয়ায় আজ তাঁকে হত্যার উদ্যোর্শে লোকজন দিয়ে মারপিট করে পা ভেঙ্গে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। তবে ইয়াকুব আলী এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আহত নুরনবী মন্ডল বিয়ালা গ্রামের ওসমান গনি মন্ডলের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের সাধারন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালণ করে আসছেন।
ভূক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বিয়ালা এলাকার ধুনট পুকুরে ক্ষেতলাল উপজেলার হোপ গ্রামের ফেরদাউস নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কালাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আসামী হয় বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলীর ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম। আর সেই মামলার স্বাক্ষী হন আহত নুরনবী মন্ডল। গত ৫ আগস্টের পর ইয়াকুব আলী ওই মামলার জের ধরে স্বাক্ষী নুরনবীর নিকট থেকে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আসছেন। এরই জের ধরে আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের কাজ সেরে মোটরসাইকেল যোগে নুরনবী মন্ডল বিয়ালা বাজারে যাওয়ার সময় বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলীর ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম, মাত্রাই ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি কর্মী তাজমহল, রেজাউল করিম, জনাব আলী, আব্দুল করিমসহ ১৫/২০ জন মিলে দেশী অস্ত্রসহ তাঁর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এ্যালোপাতারি মারপিট করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা নুরনবীর হাত ও পা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এরপর তাঁরা নুরনবীকে রাস্তা থেকে টেনে এনে পুকুরে ফেলে চলে যায়। গুরুত্বর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে রাত ৯টার দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
আহত নুরনবীর স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, ফেরদাউস হত্যার স্বাক্ষী ছিলেন আমার স্বামী। আর ওই মামলার আসামী ছিলেন বিএনপি নেতা ইয়াকুব আলীর ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম। স্বাক্ষী হওয়ার কারনে ইয়াকুব আলী গত ৫ আগস্টের পর আমাদের বাড়ী-ঘরে আগুন জালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তিনি দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আজ আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ীতে আসার পথে রেজাউল ও যুবদল নেতা আব্দুর রাজ্জাকসহ ওরা সবাই মিলে মারপিট করে হাত-পা ভেঙ্গে পুকুরে ফেলে গেছে। তিনি আরও বলেন, ইয়াকুব আলী একজন কুখ্যাত লোক। কিছুদিন আগেও তিনি বিয়ালাসহ বিভিন্ন গ্রামে লুটপাট ও ভাংচুর করেছে। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের সুষ্ঠ বিচারের দাবী করছি।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ইয়াকুব আলী বলেন, নুরনবীকে মারপিটের বিষয়ে শুনেছি, তবে কে বা কাহারা মারপিট করেছে তা আমার জানা নেই। তবে নুরনবী আমার ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার স্বাক্ষী রয়েছে।
কালাই থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত এসএম কামাল হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।