২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনে জাফর আলম রাতের ভোটের এমপি হয়। এরপর মাসউদ মোরশেদ দখলবাজী এবং কমিশন বাণিজ্যে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। কমিশন ছাড়া পৌরসভার কোন কাজে স্বাক্ষর করেন না। কমিশন না দিলে নানা ভাবে এমপি জাফর আলমকে ব্যবহার করে মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিতেন। তাই জিম্মি হয়ে ঠিকাদার এবং কাউন্সিলররা তাকে কমিশন দিতেন। সেই কমিশনের টাকা দিয়ে সে দীর্ঘ ১৬ বছর এক পৌর সভায় কাজ করেন। মাঝে সে বদলি হলেও দ্রুত আবারও চকরিয়া পৌরসভায় যোগদান করেন। সে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে মেয়রের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ব্যবহার করতেন।
এছাড়াও মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ময়লা আবর্জনা চকরিয়া পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনে ডাম্পিং করে নাম মাত্র মূল্যে চুক্তি করে হাতিয়ে নিয়েছেন ত্রিশাকোটি টাকা। মেসার্স গিয়াস উদ্দিন এন্টারপ্রাইজ, আরভিন এন্টারপ্রাইজ সহ বেশ কয়েটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্টানের সাথে চুক্তি করে সেই টাকা লুটপাট করে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মাসউদ। স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করা বিদেশী কোম্পানীর যাবতীয় আর্বজনা অপসারণে আলাদা বাজেট রয়েছে। সেই ময়লা যে কেউ চাইলে ফেলার কাজ পায়না। তাই পৌরডাম্পিং স্টেশনে ফেলার চুক্তি দেখিয়ে সেই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
অবৈধভাবে টেন্ডার বাণিজ্য করার পাশাপাশি পৌরসভার কিচেন মার্কেটে বাণিজ্য, ফুটপাত বাণিজ্য, শালিস বাণিজ্য করে চকরিয়ায় প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে মাসউদ মোর্শেদের। এছাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উন্নয়নের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে কমিশন হাতিয়ে নিতেন তিনি । পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজের লোক দিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নিয়ে নিজেই ঠিকাদারী কাজ করেছেন । প্রতিটি টেন্ডার থেকে তাকে ৫% কমিশন দিতে হয়। চকরিয়া সিটি হাসপাতাল,সিটি হোটেল,হামদান সুপার হোস্টেলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে তার মালিকানা রয়েছে । চকরিয়া পৌরসভার কিচেন মার্কেটে রয়েছে একাধিক দোকান। অনুসন্ধানে দেখা যায় চকরিয়া পৌরসভার মৌলবিরকুম বাজারে চকরিয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মাস উদ মোর্শেদের স্ত্রীর নামে ১০ শতক জমিসহ পৌর এলাকায় ৪০ গন্ডার উপরে জায়গা রয়েছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক দশ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামে রয়েছে মাসউদ মোরশেদের নামে বেনামে দশটি ফ্ল্যাট। নগরীর চকবাজারের কাপাসগোলায় লিবার্টি স্কয়ারে রয়েছ চারটি ফ্ল্যাট। এক্সেস রোড়ে দুইটির সন্ধান পায় নেকড়ে নিউজ। অন্যদিকে নগরীর ৫ টি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার বেনামী মালিকানা রয়েছে। সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে তাদের বিভিন্ন মার্কেটে দোকান বরাদ্ধ নিয়েছেন মাসুদ মোরশেদ।
যিনি মেয়র নির্বাচিত হয় তিনিই এই মাসউদ মোরশেদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। গেল ১৬ বছর ধরে মেয়রদের জিম্মি করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দখল বাণিজ্য এবং কমিশন বাণিজ্যের ভাগ দিয়ে চাকরিবিধি অমান্য করে স্বপদে বহাল ছিলেন এই মাসউদ।
তার অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন সময়ে চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলররা স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে একাধিকবার তার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন কাউন্সিলররা । কিন্তু অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে ছিল পুরো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়।
৫ আগস্টের পর তাকে স্বৈরাচারের দোসর সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে নরসিংদী বদলী করা হয়েছে।
এব্যপারে তার কাছে একাধিবার জানতে চাইলেও কোন উত্তর না দেয়ায় তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি