মুম্বাই থেকে নয়াদিল্লিতে নতুন দ্রুতগতির ট্রেন চালু হবে। মাত্র ১৪ ঘণ্টায় এই পথ পাড়ি দেওয়া যাবে। রেলকর্মী, যাত্রী—সবার কাছেই এ যেন স্বপ্নের মতো। কিন্তু স্বপ্ন দ্রুতই পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে, ট্রেনে নাশকতার চেষ্টা করে দুষ্কৃতকারী। ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’ সিনেমার গল্প। রবি চোপড়া পরিচালিত সিনেমাটিতে ছিলেন ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খান্না আর জিতেন্দ্র। ট্রেনকে কেন্দ্র করে নির্মিত জমজমাট অ্যাকশন থ্রিলারটি দর্শক টেনেছিল। সে বছরের সপ্তম ব্যবসাসফল হিন্দি সিনেমা ছিল এটি। ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’ অবশ্য পুরোপুরি মৌলিক সিনেমা নয়।
একনজরে
সিনেমা: ‘বুলেট ট্রেন এক্সপ্লোশন’
ধরন: অ্যাকশন-থ্রিলার
পরিচালনা: শিনজি হিগুচি
অভিনয়: সুয়োশি কুসানাগি, কানাতা হোসোডা, নন তাকুমি সাইতো
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
রানটাইম: ১৩৪ মিনিট
১৯৭৪ সালের হলিউড ডিজাস্টার সিনেমা ‘দ্য টাওয়ারিং ইনফার্নো’ থেকে প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত ছিল এটি। তবে সে যা–ই হোক, ট্রেন সিনেমা নিয়ে দর্শকের আলাদা আগ্রহ আছে, ঠিকঠাক বানাতে পারলে সাধারণ গল্পের সিনেমাও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ট্রেন সিনেমার কথা বলতে গত বছরের হিন্দি সিনেমা ‘কিল’-এর স্মৃতি এখনো টাটকা। নিখিল নাগেশ ভাটের সিনেমাটি দুর্দান্ত অ্যাকশনের জন্য মনে রেখেছেন ভক্তরা। এবার আলাপ করা যাক জাপানি সিনেমা ‘বুলেট ট্রেন এক্সপ্লোশন’ নিয়ে। শিনজি হিগুচি পরিচালিত সিনেমাটি গত ২৩ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে।
বুলেট ট্রেন ছুটছে। হঠাৎই উড়োফোনে জানা গেল, ট্রেনে বোমা রাখা আছে। গতি ১০০ কিলোমিটারের নিচে নামলেই বিস্ফোরিত হবে সেটি। এ–ই হলো মোটাদাগে সিনেমার গল্প। আরও বিশদে বললে সিনেমার শুরু হয় জাপানের হায়াবুসা স্টেশন থেকে। ৬০ নম্বর ট্রেনটি ছাড়বে টোকিওর উদ্দেশে। যাত্রীদের মধ্যে আছে একদল স্কুলশিক্ষার্থী, ইনফ্লুয়েন্সার, স্ক্যান্ডাল থেকে পালিয়ে বেড়ানো রাজনীতিবিদ। ট্রেন ছাড়ার পরই জানা যায় বোমার খবর। এরপরই রুদ্ধশ্বাস যাত্রার শুরু। এর মধ্যে উড়োফোনে দুষ্কৃতকারী আবার দাবি করে, ১০০ বিলিয়ন ইয়েন দিতে হবে। তবে সেটা সরকার নয়, আসতে হবে সাধারণ জনগণের পকেট থেকে। খবর শুনে ট্রেনে থাকা এক অতি উৎসাহী ইনফ্লুয়েন্সার নেমে পড়েন তহবিল সংগ্রহের কাজে।
ওদিকে ট্রেনের কন্ট্রোল রুমে তখন তুমুল উত্তেজনা। রেলের বড় কর্তারা ছাড়াও হাজির হন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। সবাই মিলে পরিকল্পনা করেন, কীভাবে যাত্রীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা যায়। তাঁরা সফল হন, নাকি শুরুর পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজ করলেও শেষ রক্ষ হয় না?
গল্পের সঙ্গে ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া আলোচিত সিনেমা ‘স্পিড’-এর মিল আছে। ডাচ নির্মাতা জান দে বন্টের সেই সিনেমায় অভিনয় করেন কিয়ানু রিভস, সান্দ্রা বুলক, গ্রাহাম ইয়োস্ট।
তবে ‘বুলেট ট্রেন এক্সপ্লোশন’ আরও বেশি প্রভাবিত ‘দ্য বুলেট ট্রেন’ থেকে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া জাপানি সিনেমার সরাসরি সিকুয়েল এটি। জুনয়া সাতো পরিচালিত সিনেমাটিতে দেখা যায়, বুলেট ট্রেনের গতি ৮০ কিলোমিটারের নিচে নামলেই বোমা বিস্ফোরিত হবে। এবার নির্মাতা ২০ কিলোমিটার গতি বাড়িয়েছেন। ‘দ্য বুলেট ট্রেন’ বক্স অফিসে সেভাবে ব্যবসা করেনি, তবে এ ধরনের সিনেমার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছিল। ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’, ‘স্পিড’, ‘রানওয়ে ট্রেন’, ‘তেজ’সহ দুনিয়ার নানা প্রান্তের নানা ভাষার সিনেমাকে অনুপ্রাণিত করে গেছে বছরের পর বছর। তাই ৫০ বছর পর এমন একটা ক্ল্যাসিক সিনেমার সিকুয়েল নির্মাণ সহজ ছিল না।
আপনি যদি ট্রেনে হামলা নিয়ে আলোচিত সিনেমাগুলো দেখে থাকেন, তাহলে ‘বুলেট ট্রেন এক্সপ্লোশন’ ছবির শেষটা আগেই বুঝে যাবেন। পরিণতি কী হবে, সেটা নতুন দর্শকেরও বুঝে যাওয়ার কথা। তবে এ ধরনের সিনেমা তো শেষের ওপর নির্ভর করে না; বরং তার আগের চ্যালেঞ্জ কতটা উপভোগ্য করে নির্মাতা হাজির করতে পেরেছেন, সেটাই থাকে দেখার। এ ক্ষেত্রে শিনজি হিগুচি সফল, মোটের ওপর একটি উপভোগ্য সিনেমা বানাতে পেরেছেন তিনি। বুলেট ট্রেনে বিস্ফোরণ হবে কি না, এ উত্তেজনার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইনফ্লুয়েন্সার, রাজনীতিবিদ, ব্যাড প্যারেন্টিং নিয়ে বার্তা দিয়েছেন।
সিনেমার কারিগরি দিকও প্রায় নিখুঁত। অভিনেতারাও যথাযথ। বিশেষ করে ট্রেনের প্রধান ম্যানেজারের চরিত্রে সুয়োশি কুসানাগি উত্তেজনা, আবেগ ছুঁয়ে যান।
‘বুলেট ট্রেন এক্সপ্লোশন’-এর বড় সমস্যা—দৈর্ঘ্য।
সিনেমার রানটাইম অনায়াসে ২০ থেকে ২৫ মিনিট কমিয়ে আনা যেত। এতে সিনেমার রোমাঞ্চে কমতি হতো না। ছবির মূল খলনায়কের আবির্ভাব ঘটে প্রায় শেষের দিকে। তাঁকে আরও একটু আগে আনা গেলে, বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিস্তারিতভাবে জানা গেলে হয়তো চরিত্রটির আবেগ আরও বেশি ছুঁয়ে যেত।
মন্তব্য করুন